রানী ইন্দিরা দেবী গভর্নমেন্ট গার্লস্ কলেজ

স্থাপিত: ২০১৪
[ পূর্বতন: ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ ( গার্লস্ উইং ) ]
পশ্চিমবঙ্গ সরকার | বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত
ডাকঘর + থানাঃ ঝাড়গ্রাম, জেলা: ঝাড়গ্রাম, পিন: ৭২১৫০৭

Rani Indira Debi Government Girls’ College

ESTD: 2014
[ Erstwhile Jhargram Raj College (Girls’ Wing) ]
Government of West Bengal | Affiliated to Vidyasagar University
P.O. + P.S.: Jhargram, District: Jhargram, PIN: 721507.

বাংলা বিভাগঃ

সাহিত্যের আয়নায় মানুষ জীবনের মুখ দেখে।সাহিত্যের উদ্দেশ্য বহুমাত্রিক, বিচিত্র জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা, বোঝা।তাই সাহিত্যের মধ্যেই ঘটে মানুষের আত্মোপলব্ধি-আত্মোত্তরণ। সাহিত্যই আমাদের মধ্যে সঞ্চার করে রসবোধ ও স্থাপন করে পারস্পরিক সহিতত্ত্ব।সাহিত্য পাঠের উপযোগিতা তাই যুগে-যুগে কালে-কালে।বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বাঙালির জাতি-সংস্কৃতির একটি সামগ্রিক ধারণা দেয়।জাতির অতীত, বর্তমানকে চেনায়—ভবিষ্যত সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে পৌঁছে দেয়।জ্ঞানের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বহুধাবিভক্ত সাহিত্যপাঠ চরিত্র, মনন ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়,রুচিবোধের সঞ্চার করে।ফলে,ব্যক্তিজীবন, শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন সমৃদ্ধ হয়।এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বাংলা বিভাগের পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। ভালো-মন্দের মিশ্রিত অভিজ্ঞতা নিয়েই বাংলা বিভাগ সাত বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।জন্মকাল থেকেই সাম্মানিক ও সাধারণ--দুটি শাখাতেই পঠনপাঠন অব্যাহত।বর্তমানে সাম্মানিক বিভাগে পাঠরতা ১০১ জন এবং সাধারণ বিভাগে পাঠরতা ২২৪ জন। ৩জন পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক এই বিভাগকে আগলে রেখেছেন সন্তানের মত।সিলেবাসের সীমিত জ্ঞানের বাইরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্যের বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে লাইব্রেরীতে রাখা হয়েছে সাহিত্যের বহু বিচিত্র বই।বিভাগীয় আলোচনাচক্র, প্রশ্নোত্তর পর্ব, বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রীদের নিজস্ব বক্তব্য উপস্থাপন, কবিতা ও গল্প পাঠ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাংলা বিভাগ সীমাবদ্ধ পঠনপাঠনকে মুক্ত মনের ডানা দিয়েছে।গতানুগতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের বাইরে বিভাগ নিজের মানবিক মুখ প্রমাণ করেছে ছাত্রীদের যেকোনো সমস্যায় বন্ধুর মতো পাশে থেকে।বিভাগ বরাবর চেষ্টা করেছে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রীরা যাতে ভালো মানুষ হিসাবে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।পঠনপাঠনের বাইরে ভাষা দিবস উদ্‌যাপন, রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন, নবীনবরণ, শিক্ষকদিবস পালন ইত্যাদি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা বিভাগ ছাত্রীদের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতিমনস্কতা গড়ে তুলতে আপ্রাণ প্রয়াসী। ছাত্রীরা বাংলা বিভাগের সম্পদ।তাদের বিচিত্র প্রতিভার আলোয় আলোকিত বাংলা বিভাগ।প্রথম বর্ষ থেকেই বাংলা বিভাগের ছাত্রীরা আপন প্রতিভার পরিচয় দিয়ে চলেছে।বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রথম বর্ষেই এই বিভাগের ছাত্রী দীপা পাত্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে গোটা কলেজকে সম্মানিত করেছিল।এই যাত্রা আজও অব্যাহত। শ্বেতা মাকুর প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকুরিরতা।স্নাতক পাস করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের বহু ছাত্রী উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।ছাত্রীদের ব্যক্তি,শিক্ষা ও কর্মজীবনে সুসামঞ্জস্যময় ভারসাম্য গড়ে তোলায় বাংলা বিভাগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদের দৃষ্টির আলোয় বাংলা বিভাগ

স্মৃতির পাতায় আমার কলেজঃ

আমি দীপা পাত্র, রানী ইন্দিরা দেবী গভর্নমেন্ট গার্লস' কলেজের ছাত্রী ছিলাম ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে।আমরাই ছিলাম প্রথম ব্যাচ।স্নাতকস্তর উত্তীর্ণ হয়েছিলাম ৬২.৮৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে।খুবি অপরিচিত ও ভিন্ন একটি পরিবেশ ছিল আমাদের কলেজের। অল্পসংখ্যক অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ক্লাস হত আমাদের।অধ্যাপকদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল।সকলে মিলে কলেজের প্রতিটা অনুষ্ঠান উৎসাহের সঙ্গে পালন করতাম।আমাদের বিভাগে শুধুমাত্র শিক্ষাগ্রহণের উপর জোর দেওয়া হত না, বরং নিজেদের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন সাধ্যমতো সব শেখাতেন অধ্যাপকরা।কলেজ ছাড়ার পর এতগুলো বছর পার করে এসে আজও মনে পড়ে কলেজজীবনের মধুর স্মৃতিগুলো।

আমার কলেজঃ

কেউ যদি আমায় জিজ্ঞাসা করেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনটি, আমি বলব রানী ইন্দিরা দেবী গভর্নমেন্ট গার্লস' কলেজে পড়াকালীনই এই অনুভূতি আমার মধ্যে জাগত এবং আজও সেই অনুভূতি অপরিবর্তিত—দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও।তাই কলেজ নিয়ে লেখার সুযোগটা আর হাতছাড়া করলাম না।কলেজে পড়াকালীন বিভাগীয় অধ্যাপকদের যে সান্নিধ্য পেয়েছি, তাতে তাঁরা শুধু শিক্ষাদাতাই নয়, জীবনে চলার পথে বন্ধুর মত পাথেয় হয়ে রয়েছেন।তাঁদের সহায়তায় একের পর এক সিঁড়ি ডিঙিয়ে কেউ পুলিশে, কেউ সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতা। কেউ আবার বর্তমান কঠিন সমাজে একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছে।অধ্যাপকদের হাত ধরেই এই চারাগাছগুলি বিকশিত হতে পেরেছিল এবং আজ বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিতে পারছে অন্যদের।

আমার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ

কথায় বলে, ছাত্রজীবন হল জীবনের সুন্দরতম সময়।আর এই কলেজের ছাত্রী হিসাবে আমি সত্যিই গর্বিত।প্রতিটি পড়ুয়ার জীবনে এই অংশটি স্বাধীন চিন্তাধারা ও পরিপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যমে সফলতার শিখরে পৌঁছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সময়।আমাদের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকাদ্বয়ের পঠনপাঠনরীতি,প্রতিটি বিষয়ে দারুণ পাণ্ডিত্য আমাদের সাহিত্য শিক্ষায় জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।সর্বোপরি,শিক্ষিকাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আমাদের শিক্ষাবর্ষের প্রতিটা দিনকে স্মরণীয় করেছে।পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,বাতসরিক খেলাধূলা—সবই এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে।আর একটি স্মরণীয় দিন হল স্নাতকস্তরে ক্ষেত্রসমীক্ষার জন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে সবাই মিলে জামবনি সংলগ্ন এলাকায় ভ্রমণ, তথ্য সংগ্রহ ও বনভোজন।শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যাই নয়,শুদ্ধ আচরণ, আত্মবিশ্বাসী হয়ে একজন ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা আমি ওনাদের থেকে পেয়েছি।তাই ওনাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।ভবিষ্যত জীবনে ওনাদের দেওয়া শিক্ষা ও আশীর্বাদ আমার পাথেয়।

আমাদের কলেজঃ

বিদ্যালয়ের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে শুরু করেছিলাম আমরা জীবনের আর এক অধ্যায়।রানী ইন্দিরা দেবী গভর্নমেন্ট গার্লস' কলেজে ভর্তি হওয়ার পর দুরু দুরু বুকে কলেজের চৌকাঠে পা রেখেছিলাম একদিন মনে একরাশ ভয় নিয়ে।যতদিন গড়িয়েছে, মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে অপরিচয়ের দূরত্ব মিটেছে।সাহিত্যের গভীরে অবগাহন করতে করতে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কখন যে এত আপন হয়ে গেছেন,বুঝি নি।মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশীলকুমার বর্মণ মহাশয়ও পরম অভিভাবকের ন্যায় আমাদের প্রতি যত্নশীল।শিক্ষাকর্মীরাও প্রয়োজনমত আমাদের সমস্যার সমাধান করেন।শুধু পড়াশোনা নয়, পড়াশোনার বাইরে বৃহত্তর জীবনের পাঠ শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের দেন।পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নানা পুস্তকের সম্ভারে সমৃদ্ধ আমাদের গ্রন্থাগার,ফলে নিয়মিত বই পড়্রার অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করেন তাঁরা।প্রথম শিক্ষাবর্ষে সরাসরি কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করতে পেরেছিলাম, কিন্তু এই করোনা-কালে নিতান্তই বাধ্য হয়ে আন্তর্জালিক মাধ্যমের সাহায্য নিতে হচ্ছে আমাদের।যদিও নিরলস প্রচেষ্টা করে চলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে আমাদের পড়াশোনাতে কোনরকম ব্যাঘাত না ঘটে।এছাড়া বিভাগীয় জাতীয়,আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে থাকে বাংলা বিভাগ যাতে আমরা সমৃদ্ধ ও সংস্কৃতি চেতনাসম্পন্ন হতে পারি।আশা রাখি খুব শীঘ্রই মহাবিদ্যালয়ে আমরা আবার মিলিত হতে পারবো এই মারীকালের অবসানে।

আমাদের বাংলা বিভাগঃ

সময়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা স্নাতকস্তরের শেষ চৌকাঠে পা রেখেছি। দীর্ঘ তিনবছরের পথচলার সাথী হিসাবে পেয়েছি স্যর ও ম্যাডামদের। যাঁরা তাঁদের স্নেহচ্ছায়া ও প্রকৃতশিক্ষাদানের মাধ্যমে আমাদের সুপ্ত জ্ঞান ও বিবেকীসত্তাকে উপ্ত করার চেষ্টা করেছেন প্রতিনিয়ত।অনলাইন কিংবা অফলাইন শিক্ষাপদ্ধতিতে নানান জ্ঞান ও জাগতিক বিকাশের জন্য পাঠ্যনির্ভর শিক্ষাচর্চার পাশাপাশি গ্রন্থাগারের নানান পুস্তকভিত্তিক সাহিত্যচর্চা, কর্মশালা, আলোচনাচক্র, ভাষাদিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, দ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর স্মরণ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছেন।আর আমরা দিয়েছি আমাদের অন্তরের ভক্তি-নম্র শ্রদ্ধা।এভাবেই স্নেহ-শ্রদ্ধার সহিতত্ত্বে বাঁধা হয়েছিল আমাদের এক সুন্দর নীড়।তবে সমাগত ভবিষ্যতে এগোতে গিয়ে এ নীড় হতে আমরাও হব বিগত।তবু বলে যাবো—যা পেয়েছি তুলনা তার নাই।

Distinguished Faculty Of The Department